মোঃ নজরুল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধি
শার্শা ব্যাপি চলছে মাটি বালু উত্তোলনের মহোৎসব, প্রশাসন নিরব
যশোরের শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন জুড়ে চলছে মাটিবালু উত্তোলন ও বিক্রয়ের মহোৎসব। এর ফলে উপজেলা ব্যাপি পরিবেশ সহ সাধারণ জনগণ রয়েছেন চরম হুমকির মুখে।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা মিলেছে মাটি বালু বিক্রয়ের মহাযজ্ঞ সহ এগুলো বহন কারী অবৈধ ট্রলি ও ট্রাক্টরের মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়ানোর দৃশ্য। অনেক পাকা রাস্তা দেখে চেনার উপায় নেই এটা পাকা রাস্তা না মাটির রাস্তা। অনেক সময় হালকা বৃষ্টি হলেই সড়কগুলো পিচ্ছিল হয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা।
মহাসড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়কে এ সকল যানবাহন চলাচলের ফলে ধুলায় পথচারী সহ সড়কের পাশ্ববর্তী দোকানদার গণ আছেন মহা বিপদে। বেশিরভাগ মাটি বালু খেকো ব্যবসায়ীরা এলাকায় রাজনৈতিক সহ নানা প্রভাব থাকার কারণে সাধারণ জনগণ নিরবে সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করছেন। কোন কিছু বলার উপায় নেই। যেখানে মহাসড়কে ট্রলি ট্রাক্টর-থ্রি-হুইলার যানবাহন চলাচল নিষেধ সেখানে বেনাপোল টু ঝিকরগাছা, নাভারণ টু বাঁগাআচড়া মহাসড়কে প্রতিদিনই এসকল যানবাহন নাভারণ হাইওয়ে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে চলাচল করছে দেদারছে। কিন্তু প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ ভূমিকা নেই বলে জানান স্থানীয় ভোক্তভোগীরা।
এবিষয়ে নাভারণ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মনজুর আলমকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার যানবাহন চলাচল নিষেধ, আমরা প্রতিদিনই মামলা দিচ্ছি কিন্তু তারপরও সচেতন হচ্ছেনা। তবে এবিষয়ে আমরা কঠোর পদক্ষেপ সহ জনগণকে সচেতন করতে প্রয়োজনে মাইকিং করবো।
শার্শার লক্ষণপুর বাজারের একাধিক দোকানদার সহ পথচারী বলেন, প্রায় সকল সময়ই এ রোড দিয়ে মাটি ও বালুর ট্রাক্টর চলাচল করে। তবে শেষ ১ মাস যাবৎ প্রতিনিয়ত রোডে মাটির ট্রাক্টর চলাচলের ফলে রোডে আসার কোন উপায় নেই। রাস্তার পাশে বসবাস কারি অনেক পরিবার জানান, তারা ধুলার জন্য কোন খাদ্য খেতে পারছেন না।
শার্শা উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা যোগদানের পরপরই কয়েকটি মাটি ও বালু ব্যবসায়ীদের জরিমানা করলেও বর্তমান নিরব ভূমিকায় রয়েছেন প্রশাসন।
এবিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথির মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মাটি ও বালু উত্তোলনের কাছাকাছি স্থানে মাটির ক্ষয় যেমন ঘটছে, তেমনি মাটির গুণাগুণও নষ্ট হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্থর নেমে যাওয়ায়,ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া নলকূপে পানি পাওয়াও কষ্টকর হয়। বর্তমান ইরী সিজনে বালু উত্তোলনের ফলে অনেক মাঠে কৃষি জমিতে পানি উঠছে না স্যালো ম্যাসিনে। ফলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে কৃষকদের।
এসব নেতিবাচক প্রভাবের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন বিপন্ন হচ্ছে তেমনি মানুষও আক্রান্ত হচ্ছে নানা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে। বালু উত্তোলনে সৃষ্ট বায়ুদূষণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মধ্যে পরিবর্তন ঘটার ফলে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি তাদের খাদ্যের উৎসও ধ্বংস হচ্ছে। ফলে মৎস্য প্রজনন-প্রক্রিয়া পাল্টে যাওয়ার পাশাপাশি চাষাবাদের জমিও নষ্ট হচ্ছে।
শার্শা উপজেলার একাধিক মাটি বালু ব্যবসায়ীদের অনুসন্ধানে জানা যায়,তারা উপজেলা প্রশাসন সহ হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে কাজ করছেন। শার্শা উপজেলার একাধিক সচেতন মহল জানান, শীতের সিজেন শুরু হলেই মহাসড়ক সহ রাস্তা ঘাটে ধুলা এবং থ্রিহুইলার গাড়ির জন্য বের হবার মত নেই। এর প্রধান কারন উপজেলা ব্যাপি ইট ভাটার মাটির প্রয়োজন হওয়ার কারনে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের সাথে এসকল ব্যবসায়ীদের সাথে গোপন যোগাযোগ আছে, তা না হলে তাদের নাকের ডগায় থেকে কিভাবে তারা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে।।
Leave a Reply